Header Ads Widget

Ticker

6/recent/ticker-posts

টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের কাছে প্রত্যাশা ও তাদের সামর্থ্য!

বাংলাদেশ ক্রিকেট

ক্রিকেটের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ টুর্নামেন্ট, টি২০ বিশ্বকাপের নবম আসর শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে বেশ কিছু ম্যাচ। এবারই প্রথম সবচেয়ে বেশি কুড়ি দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জমজমাট এই আসরটি। আরো ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে এবারই প্রথম আইসিসির কোন সহযোগী সদস্য দেশ এ ধরনের টুর্নামেন্টের সহ-আয়োজক হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আমেরিকা মহাদেশে ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করতে আইসিসিকে এই চ্যালেঞ্জিং সিধ্যান্তটি নিতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি ভেন্যুতে প্রথম রাউন্ডের মোট ১৬টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ফাইনাল, নকআউট, সুপার এইটের সবগুলো ম্যাচ সহ প্রথম রাউন্ডের বাকি ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে।

প্রথম রাউন্ডের বেশির ভাগ ম্যাচ তেমন উত্তাপ না ছড়ালেও সুপার এইট রাউন্ড থেকেই টুর্নামেন্ট জমে উঠবে বলে আশা করা যায়। তবে গ্রুপ ডি থেকে বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কার জন্য প্রথম রাউন্ডেই অগ্নিপরীক্ষা অপেক্ষা করছে! ডি গ্রুপে শ্রীলঙ্কা ছাড়াও বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ সাউথ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ড ও নেপাল। সাউথ আফ্রিকার সুপার এইটে যাওয়াটা অবধারিত ধরা যায়। দ্বিতীয় পজিশনের জন্য মূল লড়াইটা হবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সাথে! উল্লেখ্য, এবারের আসরে চার গ্রুপ থেকে মোট দুটি করে দল সুপার এইট রাউন্ডে খেলার সুযোগ পাবে। তবে বর্তমান সময়ে টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের পারফরমেন্স দেখে আশাবাদী হওয়ার মত লোক খুব একটা নেই! টি২০ ক্রিকেটে ছোট দলও যে কোনো সময় বড় দলকে হারিয়ে দিতে পারে। নেদারল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের ম্যাচ কঠিন হয়ে উঠতে পারে; এমনকি নেপালও পরীক্ষা নিতে পারে! ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ক্রিকেটার ইয়ান বিশপ তো সরাসরিই বলে দিয়েছেন, " বিশ্বকাপে ছোট দলগুলির সাথে বড় দলগুলোর হারার সম্ভাবনা রয়েছে; ছোট দলের সাথে হারার সম্ভাবনা বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি।" বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডের সাথে হারবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন!

ইয়ান বিশপের মত আরো অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকই এবারের টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তেমন কোন সম্ভাবনা দেখছেন না! ভারতীয় জাতীয় দলের ক্রিকেটার রবিচন্দ্রন অশ্বিন তার ইউটিউব চ্যানেলে সাবেক ক্রিকেটার রবিন উথাপ্পা এবং ক্রিকেট বিশ্লেষক প্রসন্ন আগোরামকে নিয়ে বাংলাদেশের সমালোচনায় মেতে উঠেন। তাদের মতে বাংলাদেশের এই দলে তেমন কিছুই নেই! ওপেনিং, মিডল অর্ডার, বোলিং ইউনিট সব জায়গায়ই ঘাটতি আছে। অধিনায়ক শান্তর ক্যাপ্টেন্সি ও তিন নাম্বার পজিশনে খেলা নিয়েও সমালোচনা হয়। তারা মনে করেন সাকিব তিন নাম্বারে সবচেয়ে সফল ব্যাটার, কিন্তু শান্তর কারনে তাকে পজিশনটি ছেড়ে দিতে হচ্ছে; ওদিকে শান্তও তেমন কিছু করতে পারছে না! তবে তাদের মতে এই আসরে এক্স ফ্যাক্টর হতে পারেন মোস্তাফিজুর রহমান, যদিও ম্যাচে ছয় নাম্বার বোলার কি হবে এ ব্যাপারে তারা সন্দিহান!

বিশ্বকাপ শুরু হয়ে গেছে কিন্তু ক্রিকেট উৎসবের আমেজ বাংলাদেশের ভক্ত-সমর্থক, ক্রিকেট অনুরাগী বা মিডিয়া কাউকেই যেন উচ্ছ্বসিত করছে না! এর একমাত্র কারণ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরমেন্স। কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে টি-২০ সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ! এই সিরিজ হারা দেশের ক্রিকেটের জন্য লজ্জাজনক এক অধ্যায়! এর আগে আর কোনো টেস্ট প্লেয়িং দেশ আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশের সাথে সিরিজ হারেনি। বিশ্ব ক্রিকেট মিডিয়ায় এ নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে, অনেকে ট্রল করতেও ছাড়েনি। গত মাসে আরেক দুর্বল দল জিম্বাবুয়ের সাথেও বলার মত পারফর্ম করতে পারেনি বাংলাদেশ; বিশেষ করে টপ অর্ডারের ব্যাটিং দৈনতা ছিল চোখে পড়ার মত! সিরিজ জিতলেও শেষ ম্যাচ হারতে হয়েছে।

টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্য-ব্যর্থতা!

২০০৭ সালের প্রথম টি২০ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানো ছাড়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের বলার মত আর কোনো বড় সাফল্য নেই! সাউথ আফ্রিকার জোহান্সবার্গে গ্রুপ পর্বে মো: আশরাফুলের এক মহাকাব্যিক ইনিংসের সুবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। আশরাফুলকে যোগ্য সমর্থন দিয়েছিলেন আফতাব আহমেদ। দুজনের ১০৯ রানের অনবদ্য জুটির সুবাদে জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। আশরাফুল ২৭ বলে ৬১ আর আফতাব ৪৯ বলে করেছিলেন ৬২ রান। এরপর টি-২০ বিশ্বকাপের আর কোনো আসরেই বড় কোনো দলকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ! ছোট দলের কাছেও হারতে হয়েছে বেশ কিছু ম্যাচ। ২০১৪ সালে নিজ দেশে আয়োজিত বিশ্বকাপে হংকংয়ের মত দলের কাছেও হারতে হয়েছে! স্কটল্যান্ডের সাথেও হারের রেকর্ড আছে! টি-২০ বিশ্বকাপের গত আট আসরে বাংলাদেশ মোট ৩৮টি ম্যাচ খেলে জিততে পেরেছে মাত্র ৯টি ম্যাচ, হেরেছে ২৮টি আর একটি ম্যাচে কোন ফলাফল হয়নি।

দলের ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন শান্ত ভক্ত-সমর্থকদের এবারের বিশ্বকাপে দলের কাছে খুব বেশি প্রত্যাশা না করতে বলেছেন! এমনিতেই তিনি অফ ফর্মে উপরন্তু দলের ক্যাপ্টেনের মুখে এ ধরনের বক্তব্য শুনে হতাশ বাংলাদেশ দলের ভক্ত-সমর্থকরা। তবে শান্তর সুরে কথা বলেননি বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন। তিনি বলেন,"প্রত্যাশা কম হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্রতিদিনই আমাদের কোনো না কোনো প্লেয়ার ভাল খেলছে; যেদিন একসাথে সবাই ভাল খেলবে সেদিনই আমরা জিতবো।" দলের অভিজ্ঞ প্লেয়ার সাকিব, মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে তিনি আশাবাদী। তানজিদ তামিম, তৌহিদ হৃদয়, রিশাদ, জাকের আলির মত নতুন প্লেয়াররাও ভাল করতে পারে বলে মনে করেন তিনি, তবে তাদেরকে আরো সুযোগ দিতে হবে। শান্ত, লিটন আর সৌম্যও অফ ফর্ম কাটিয়ে যে কোনো সময় রানে ফিরে আসবে বলে মনে করেন তিনি! সভাপতি আশার বাণী শোনালেও খেলার মাঠে নিজেদের সেরাটা দিয়েই জিততে হবে। পরিসংখ্যান আর ক্রিকেট বিশ্লেষকদের ভুল প্রমাণ করে বাংলাদেশ দল ভাল কিছু করে দেখাতে পারে কিনা সেই আশায়ই থাকবে ভক্ত-সমর্থকরা। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ