টি২০ বিশ্বকাপ ২০২৪ এর প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মত গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচ জিতে সুপার এইটে জায়গা করে নিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। সুপার এইট রাউন্ডে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও আফগানিস্তান। ম্যাচগুলো যথাক্রমে অনুষ্ঠিত হবে ২১,২২ ও ২৫শে জুন।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে কঠিন গ্রুপে পড়া বাংলাদেশ সুপার এইটে জায়গা করতে পারবে কিনা সেই সন্দেহই ছিল সবার মনে! টি-২০ বিশ্বকাপের আগের আসরগুলোতে বাংলাদেশের পারফরমেন্স, সেইসাথে বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সিরিজ হারা, সবকিছু মিলিয়ে খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসও ছিল তলানিতে। তবে শ্রীলঙ্কার সাথে প্রথম ম্যাচ জেতার পর থেকেই স্বপ্নের পরিধি বাড়তে থাকে। সব জল্পনা-কল্পনা ছাড়িয়ে নেদারল্যান্ড আর নেপালকে হারিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে সুপার এইটের টিকিট কেটেছে বাংলাদেশ। সুযোগ ছিল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার; সাউথ আফ্রিকার সাথে জিততে জিততে শেষ বলে হেরে না গেলে পয়েন্ট টেবিলের এক নম্বরে অবস্থান করতে পারতো বাংলাদেশ। যদিও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলেও ফিক্সচারে কোনো পরিবর্তন হতো না! কারণ আইসিসি র্যাংকিং অনুসারে প্রতি গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দল নির্ধারণ করে টিকিট কাটার সুবিধার্থে পূর্বেই সুপার এইটের ফিক্সচার করে রেখেছে। ডি গ্রুপ থেকে সাউথ আফ্রিকা চ্যাম্পিয়ন ও শ্রীলঙ্কা রানার্সআপ এভাবেই সুপার এইটের ফিক্সচার করা! যেহেতু শ্রীলঙ্কা বাদ পড়েছে এবং বাংলাদেশ তাদের জায়গায় সুপার এইটে যাচ্ছে তাই শ্রীলঙ্কার জন্য নির্ধারিত রানার্সআপ দল হিসেবেই বাংলাদেশের সুপার এইট রাউন্ডের ফিক্সচার হয়েছে। এখানে বাংলাদেশ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলেও ফিক্সচারে কোন পরিবর্তন হতো না!
এবার বাংলাদেশের সুপার এইটে কোয়ালিফাই করার মূল কৃতিত্ব বোলারদের। লো-স্কোরিং ম্যাচগুলোতে স্বল্প পুঁজিও ডিফেন্ড করা গেছে শুধু মাত্র বোলারদের অসাধারণ নৈপুণ্যে। গ্রুপ পর্ব শেষে সেরা বোলারদের তালিকার দিকে তাকালেই বোলারদের ইম্প্যাক্ট স্পষ্ট হয়ে উঠে। ৪ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে তালিকার পঞ্চম স্থানে আছেন তানজিম হাসান সাকিব। মুস্তাফিজও আছেন সেরা দশের তালিকায়। ৪ ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা ৭। সমান ৭ উইকেট নিয়ে সেরা কুড়িতে আছেন রিশাদ হোসেন এবং তাসকিনও। আবার ডট বল দেয়ার তালিকায় সেরা পাঁচে আছেন বাংলাদেশের দুই বোলার। ৬৭টি ডট বল করে তালিকার এক নাম্বারে মুস্তাফিজ আর ৬১টি ডট বল করে তালিকার পাঁচ নম্বরে তানজিম সাকিবের পরিসংখ্যান প্রমাণ করে বাংলাদেশের বোলিং মোকাবেলা করা কতটা কঠিন ছিল! নেপালের সাথে ম্যাচে ২৪ বলের মধ্যে রেকর্ড ২১টি বল ডট দিয়ে জয়ের নায়ক তানজিম সাকিব। তার আর মুস্তাফিজের বিধ্বংসী বোলিংয়ে বিশ্বকাপের সর্বনিম্ন (১০৬) স্কোর ডিফেন্ড করে রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ। রিশাদ হোসেনও ছিল অসাধারণ। এবারের বিশ্বকাপে বল টার্ন করানোর ক্ষেত্রে সে অসাধারণ পারদর্শিতা দেখিয়েছে।
বোলিং ইউনিট যতটা স্বপ্ন দেখাচ্ছে ঠিক ততটাই শঙ্কা জাগাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাটিং! নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে দলের টপ অর্ডার কোনোভাবেই ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তৌহিদ হৃদয়। ৪ ম্যাচে ২৩.৭৫ গড়ে তিনি রান করেছেন ৯৫। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাকিব আল হাসান নেদারল্যান্ডের সাথে ফিফটির সুবাদে ৩০.৬৬ গড়ে সংগ্রহ করেছেন ৯২ রান। এছাড়া উল্লেখ করার মত মাহমুদুল্লাহ ৪ ম্যাচে করেছেন ৭৪ রান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লিটন দাসের ৩৬ ছাড়া ওপেনারদের বলার মত কোন ইনিংস নেই। লিটন ৪ ম্যাচে ৫৬, তানজিদ তামিম ৪ ম্যাচে ৪৭ আর সৌম্য সরকার ১ ম্যাচ খেলে ২ রান করেছেন। ওয়ান ডাউনে নামা দলের ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসের শান্তর ব্যাটিং আরো ভয়াবহ! ৪ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ২৬ রান! মূলত টপ অর্ডারের সবার একসাথে ফর্মহীনতা বাংলাদেশের জন্য বড় চিন্তার কারণ। বড় ম্যাচগুলোতে একটা সলিড ওপেনিং জুটি অথবা দ্বিতীয় উইকেট জুটি গড়তে না পারলে ম্যাচ জেতা কঠিন। দলের মিডল অর্ডারে মোটামুটি ভারসাম্য আছে। মাহমুদুল্লাহ, তৌহিদ হৃদয় সাম্প্রতিক সময়ে দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। নেপালের সাথে ফিফটি করে সাকিবও ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে। জাকের আলি বা রিশাদ হোসেনের মধ্য থেকে কারো একজনের জ্বলে ওঠাটা হবে বাড়তি পাওনা! তবে টপ অর্ডারের ইম্প্যাক্ট না থাকলে দলের উপর চাপ বাড়বে; ম্যাচ জেতা কঠিন হবে।
বাংলাদেশকে সেমি-ফাইনালে যেতে কমকক্ষে দুটো ম্যাচ জিততেই হবে। দুটো ম্যাচ জিতলেই হবে না, রান রেটের হিসাবও আসতে পারে! এক্ষেত্রে আফগানিস্তানের সাথে অবশ্যই জিততে হবে। বিশ্বকাপে আগেও বাংলাদেশ আফগানিস্তানের হারিয়েছে; সেটারই পুনরাবৃত্তি করতে হবে। তবে তার আগে অস্ট্রেলিয়া বা ইন্ডিয়ার মধ্যে যে কোন একটা দলকে হারাতে হবে। যদিও কাজটা কঠিন তবে সামর্থ্যের সেরাটা দিতে পারলে অসম্ভব কিছু না! দুটো দলকেই টি২০ ম্যাচে হারানোর রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। এবারের বিশ্বকাপে কন্ডিশন বা পিচের কারণে ছোট দলেরও সম্ভাবনা আছে যেটা গ্রুপ পর্বেই প্রমাণ হয়েছে। নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তানের মত দলও বাদ পড়েছে। আবার যুক্তরাস্ট্র, আফগানিস্তান সুপার এইটে চলে গেছে। বৃষ্টিও এক্ষেত্রে আশীর্বাদ হতে পারে! বাংলাদেশের প্রতিটা ম্যাচেই বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টির কারণে পয়েন্ট ভাগাভাগি হলে বড় দলগুলো সমস্যায় পড়তে পারে। টি-২০ ক্রিকেটে বড় দল ছোট দল বলে কিছু নেই; এই তত্ত্ব মাথায় রেখে বাংলাদেশকে এখন এগিয়ে যেতে হবে! আমাদের হারানোর কিছু নেই; স্বপ্নটা বড় করার এখনই সময়!
0 মন্তব্যসমূহ