ক্রিকেট খেলার জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলছে এবং তা ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ক্রিকেট ম্যাচগুলো দীর্ঘ সময় নিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ায় খেলোয়াড়, দর্শক ও কলাকুশলীদের দীর্ঘ সময় মাঠে উপস্থিত থাকতে হয়। একটি অভিজাত ও ঐতিহ্যবাহী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলতে পারা ও পারফর্ম করতে পারাটা দলের জন্য ও খেলোয়াড়দের জন্য যেমন মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানজনক ঠিক তেমনি দর্শক, ধারাভাষ্যকারসহ ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সকল কলাকুশলীদের জন্যও উপভোগ্য ও আনন্দদায়ক। বেশিরভাগ দৃষ্টিনন্দন ও ঐতিহাসিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামগুলো ক্রিকেটের আদি দুই দেশ ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত হলেও ভারত, সাউথ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজেও গড়ে উছেছে বেশ কিছু বিখ্যাত ক্রিকেট গ্রাউন্ড। জনপ্রিয়তা ও জরিপের ভিত্তিতে এরকম কিছু বিখ্যাত স্টেডিয়াম এক নজরে দেখে নেয়া যাক।
১। লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড:
ক্রিকেট বিশ্বে লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড "লর্ডস" নামেই বেশি পরিচিত। ইংল্যান্ডের লন্ডনে সেন্ট জন'স উড এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক এই ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে হোম অব ক্রিকেট বা ক্রিকেটের আবাসভূমি নামে অভিহিত করা হয়। ১৮১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ২৮০০০ দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন মনোরম এই ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি ইংল্যান্ডের সর্ববৃহৎ ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ওয়ানডে বিশ্বকাপের মোট ৪টি ফাইনাল এই মাঠেই অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড:
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড বা সংক্ষেপে এমসিজি অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এটি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ইয়ারা পার্কে অবস্থিত। ১৯৭৭ সালে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহাসিক প্রথম টেস্ট ম্যাচটি এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৫৬ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ও ২০০৬ সালের কমনওয়েলথ গেমসের জন্যও স্টেডিয়ামটি ব্যবহার করা হয়েছিল। এক লাখের উপরে দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই স্টেডিয়ামটি ক্রিকেট ছাড়া অন্যান্য খেলার জন্যও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১৯৯২ ও ২০০৬ সালে প্রচুর অর্থ ব্যয়ে সংস্কার করে একে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। সুউচ্চ ফ্লাড লাইট টাওয়ার ও আলোক সক্ষমতায় স্টেডিয়ামটি বিশ্বসেরা।
৩। ইডেন গার্ডেন:
ভারতের কলকাতায় অবস্থিত "ইডেন গার্ডেন" ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি ভারতের ক্রিকেট ঐতিহ্যের প্রতীক। প্রায় ৯০,০০০ দর্শক ধারণ ক্ষমতার প্রাচীন এই ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি ১৮৬৪ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম। বর্তমানে আইপিএলের দল কলকাতা নাইট রাইডার্স, বেঙ্গল ক্রিকেট দল ও ভারতের জাতীয় দলের হোম গ্রাউন্ড হিসেবে স্টেডিয়ামটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১৯৩৪ সালে ভারতের প্রথম টেস্ট ও ১৯৮৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল ইডেন গার্ডেনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ঐতিহ্যবাহী এই ক্রিকেট গ্রাউন্ডটি বহু ঘটনা ও ইতিহাসের সাক্ষী।
৪। দ্যা ওভাল:
ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন ক্রিকেট স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে "দ্যা ওভাল" অন্যতম। ২৭,৫০০ দর্শক ধারণ ক্ষমতার এই স্টেডিয়ামটি ১৮৬৫ সালে লন্ডনের কেনিংটন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। টেস্ট ক্রিকেটের জন্য স্টেডিয়ামটি খুবই বিখ্যাত। ১৮৮০ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টেস্ট এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। স্যারে কাউন্টি ক্রিকেট দলের হোম গ্রাউন্ড হিসেবেও স্টেডিয়ামটি পরিচিত। স্পনসরশিপের কারণে স্টেডিয়ামটিকে "কিয়া অভাল" নামেও অভিহিত করা হয়।
৫। ইডেন পার্ক:
কলকাতার ইডেন গার্ডেনের সাথে নামের মিল থাকলেও এটি অবস্থিত নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড শহরে। ১৯০০ সালে আইকনিক এই স্টেডিয়ামটি উদ্বোধন করা হয়েছিল। ৫০,০০০ দর্শক ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়ামটি নিউজিল্যান্ডের সর্ববৃহৎ ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক দিয়ে স্টেডিয়ামটি খুবই সমৃদ্ধ। ক্রিকেট ছাড়াও স্টেডিয়ামটিতে নিয়মিত রাগবি ও ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়। এই মাঠে একাধিকবার রাগবি বিশ্বকাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৫ সালের ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
৬। ওল্ড ট্রাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ড:
ইংল্যান্ডের গ্রেটার ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে স্টেডিয়ামটি অবস্থিত। ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্টেডিয়ামটি ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় প্রাচীন স্টেডিয়াম। ২৬০০০ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার এই স্টেডিয়ামটিকে সম্প্রচারজনিত কারণে এমিরেটস ওল্ড ট্রাফোর্ড নামেও পরিচয় করানো হয়। শুরুর দিকে মাঠটি ম্যানচেস্টার ক্রিকেট ক্লাবের অনুশীলনী মাঠ থাকলেও বর্তমানে ল্যঙ্কাশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের নিজস্ব মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১৮৮৪ সালে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহাসিক প্রথম অ্যাসেজ সিরিজের প্রথম ম্যাচটি এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১৯ সালের ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপের দুটি সেমিফাইনালও এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
৭। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম:
নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও সর্বাধিক দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ভারতের আহমেদাবাদে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণ ক্ষমতা ১,৩২,০০০। ১৯৮২ সালে স্টেডিয়ামটি প্রতিষ্ঠা করা হয় যা মতোরা স্টেডিয়াম নামেও পরিচিত। প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে স্টেডিয়ামটি পুনঃসংস্কার করা হয়। ২০২৩ সালের ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ও ফাইনাল ম্যাচ এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৮। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড:
নাম সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড বা সংক্ষেপে এসসিজি হলেও অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন এই স্টেডিয়ামটি ব্যবহৃত হয় পেশাদার ফুটবল ও রাগবি লীগের জন্যও। ১৮৪৮ সালে স্টেডিয়ামটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরুতে ৪০,০০০ দর্শক ধারণ ক্ষমতা থাকলেও পুনঃসংস্কারের সময় ধারণ ক্ষমতা কমিয়ে ৩৬,০০০ করা হয়। স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, শচিন টেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারাদের পদচারণায় মুখরিত এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে শতাধিক টেস্ট, ওয়ানডে ম্যাচ। ২০০৭ সালে কিংবদন্তি ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন ও গ্লেন ম্যাকগ্রা এই মাঠেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন।
৯। ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়াম:
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহান্সবার্গে অবস্থিত ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামটি অনেক ক্রিকেট ইতিহাসের সাক্ষী। ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড, দ্রুততম সেঞ্চুরি সবকিছুই হয়েছে এখানে। নান্দনিক এই স্টেডিয়ামটির দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৩৭,৫০০। স্টেডিয়ামটি ১৯৯২ সালে নির্মাণ করা হয়েছে।
১০। কেনসিংটন ওভাল:
বার্বাডোজের রাজধানী ব্রিজটাউনে দ্যা কেনজিংটন ওয়াল স্টেডিয়ামটি অবস্থিত। ১৮৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত দেড়শো বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়ামটিকে এই দ্বীপের সর্বোৎকৃষ্ট ক্রীড়াক্ষেত্র বলা হয়। স্টেডিয়ামটি মূলত ক্রিকেট খেলার জন্যই ব্যবহৃত হয়। মাঠের দর্শক ধারণ ক্ষমতা ২৮,০০০। সর্বশেষ ২০২৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল ও ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ