জুলাই বিপ্লবের পর ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মত বিসিবিতেও পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। সরকার সমর্থিত ও আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকজন পরিচালক দৃশ্যপটের বাইরে বা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় শূন্যতা তৈরি হয়েছে বিসিবি পরিচালনা কমিটিতে। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ইমেইলের মাধ্যমে পরিচালক মণ্ডলীর নিকট তার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। পাপনের পদত্যাগের দিনই জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক নির্বাচক ফারুক আহমেদ বোর্ড সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। এছাড়া পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়, খালেদ মাহমুদ সুজন, জালাল ইউনুস সহ বেশ কয়েকজন প্রাক্তন কর্মকর্তা।
বিসিবির পরিচালক মণ্ডলীর সদস্য সংখ্যা ২৫। কিন্তু বর্তমানে কয়েকজন পরিচালকের পদত্যাগ, কয়েকজনের আত্মগোপনে থাকা ও একজন পরিচালকের মৃত্যু হওয়ায় বর্তমানে সভায় উপস্থিত থাকার মত সদস্য সংখ্যা মাত্র ১০ জন। পরিচালকদের বিরাট একটা অংশ সভায় অনুপস্থিতির কারণে নীতি নির্ধারণী বিষয়ে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন রকমের জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিসিবি এখন জোড়াতালি দিয়ে চলছে; এমনটাই মন্তব্য করেছেন জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় ও অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বুলবুলের কথার সাথে একমত বোর্ডের পরিচালকরা। এমনকি সদ্য নিয়োগ পাওয়া যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও বর্তমান ক্রিকেট বোর্ডের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেছেন।
বোর্ডের এই সীমাবদ্ধতার মাঝেই বিপিএলের ১১তম আসরের প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। আগামী ৩০শে ডিসেম্বর থেকে ৭ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাতটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের অংশগ্রহণে দেশের তিনটি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট উৎসব। ইতিমধ্যে বিপিএলের ড্রাফট ও চূড়ান্ত সূচি নির্ধারিত হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রথমবার বিপিএল আয়োজিত হয়েছিল ২০১২ সালে। ঐ বছরই বিসিবির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন নাজমুল হাসান পাপন। তারপর থেকে যতগুলো বিপিএলের আসর আয়োজন করা হয়েছে সবগুলোই নাজমুল হাসান পাপনের আমলে। দীর্ঘ এক যুগের পর এবারই প্রথম বিপিএল আয়োজিত হবে পাপনকে ছাড়া।
এবারের বিপিএলকে আকর্ষণীয় করতে ও বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নিয়েছে বিসিবি। উদ্বোধনি অনুষ্ঠান সহ ও পুরো টুর্নামেন্টে দেখা যেতে পারে ফুটবল এ ক্রিকেটের ইন্টারন্যাশনাল সুপারস্টার ও হলিউডের সেলিব্রিটিদের। বিসিবির অন্যতম পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহমি বলে; "আমাদের অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের অনেক গ্লোবাল কানেকশন রয়েছে। আন্তর্জাতিক সেলিব্রিটিদের বিপিএলে সংযুক্ত করতে ড. ইউনুসের ইমেজ ভাল কাজে আসবে। ড. ইউনুস ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকের পরিকল্পনার সাথেও যুক্ত ছিলেন।" নাজমুল আবেদীন আরো বলেন; "এ ধরনের ইভেন্টগুলোর সাথে বিভিন্ন মানুষজনকে সম্পৃক্ত করে তাদেরকে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে কীভাবে উদ্বুদ্ধ করা যায় এ বিষয়গুলো আমাদের প্রধান উপদেষ্টার চেয়ে আর কেউ ভাল জানে না।" বিদেশি সেলিব্রেটিদের সাথে দেশি সেলিব্রিটিরাও যে যুক্ত থাকবেন তার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে প্লেয়ারর্স ড্রাফট অনুষ্ঠানে। ড্রাফটে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের চিত্রনায়ক ও ঢাকা ক্যাপিটালসের মালিক সাকিব খান।
বিপিএলের গুণগত মান উন্নয়নের জন্যও বিসিবির পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।এবারের বিপিএলে ম্যাচ চলাকালে গ্যালারীতে দর্শকদের জন্য বিনামূল্যে পানির সরবারোহ রাখা হবে। স্টেডিয়াম ও আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হবে। মুঠোফোন ও আ্যপস ব্যবহার করে অনলাইনে টিকেট কাটার সুযোগও থাকবে। বিদেশি আম্পায়ার, ধারা ভাষ্যকার ও কলাকুশলী নিয়োগ করা হবে। এছাড়া উন্নত সম্প্রচার, রিভিউ সিস্টেম ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো যাতে নিশ্চিত থাকে সে ব্যাপারে বিসিবির পক্ষ থেকে বিশেষ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ