সময় চক্রে শেষ হয়ে যাচ্ছে আরেকটি বছর। ঘটনাবহুল ২০২৪ কে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরন করে নিতে প্রস্তুত সারা বিশ্ব। সাফল্য ব্যর্থতা মিলিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যও ২০২৪ ছিল ঘটনাবহুল একটি বছর। ব্যর্থতার পাশাপাশি এ বছর সাফল্যের খাতায় যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু নতুন অর্জন।
বছরের সবচেয়ে আনন্দের প্রাপ্তি ছিল অনুর্ধ্ব-১৯ দলের এশিয়া কাপ জয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত যুব এশিয়া কাপের ১১তম আসরে ভারতকে ৫৯ রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে ইয়াং টাইগাররা। গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার সাথে হারলেও আফগানিস্তান ও নেপালের সাথে জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। ফাইনালে ৮ বারের চ্যাম্পিয়ন ভারত তেমন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারে নি। ১৯৮ রানের স্বল্প পুজি নিয়েও বোলারদের দাপটে সহজে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ। ফাইনালসহ পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারন পারফরমেন্স করে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ ও ম্যান অব দ্যা সিরিজ নির্বাচিত হন ইকবাল হোসেন ইমন।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের জন্যও ২০২৪ ছিল উত্থান-পতনের বছর। বছরের শেষদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ১-১এ টেস্ট সিরিজ ড্র করার পাশাপাশি ৩ ম্যাচের টি২০ সিরিজে স্বাগতিকদের হোয়াইট ওয়াশ করে বছরের শেষটা রঙিন করেছে টাইগাররা। অবশ্য শক্তির জায়গা ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ তে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এর আগে নভেম্বরে শারজায় অনুষ্ঠিত তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে আফগানিস্তানের কাছে ২-১ এ সিরিজ হেরে গেছে বাংলাদেশ।
সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে টেস্ট ও টি২০ সিরিজ খেলতে ভারত সফর করে বাংলাদেশ। সেখানে ২ ম্যাচের টেস্ট ও ৩ ম্যাচের টি২০ সিরিজের সবগুলো ম্যাচই হেরে যায় বাংলাদেশ। এরপর অক্টোবর- নভেম্বরে ঘরের মাঠে সাউথ আফ্রিকার সাথে ২ দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের সবগুলো ম্যাচেও পরাজিত হয় টাইগাররা। এই সিরিজেই ঘরের মাঠে সাকিব আল হাসান তার ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলার ঘোষনা দিলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তা আর সম্ভব হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েও মাঝপথ থেকে ফেরত যেতে হয় তাকে। ধরা যায় বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাকিব অধ্যায়ের এখানেই সমাপ্তি!
বছরের অন্যতম সাফল্যটা আসে পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে টেস্ট সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ করার মাধ্যমে। আগষ্ট-সেপ্টেম্বরে দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে পাকিস্তান সফরে যায় টাইগাররা। রাউয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে ৬ উইকেট এবং দ্বিতীয় টেস্টে ১০ উইকেটে জয়ের মাধ্যমে পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে প্রথমবার টেস্ট হারানোর পাশাপাশি হোয়াইট ওয়াশ করার স্বাদ পায় বাংলাদেশ।
বছরের মাঝামাঝি জুন-জুলাইতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয় টি২০ বিশ্বকাপের নবম আসর। গ্রপ পর্বে সাউথ আফ্রিকার সাথে হারলেও শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ড ও নেপালকে হারিয়ে সুপার এইট রাউন্ডে যায় বাংলাদেশ। তবে সেখানে নিজেদের গ্রুপের অন্যান্য প্রতিপক্ষ ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তানের সাথে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে টাইগাররা। বিশ্বকাপের ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। নবাগত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ২-১ এ সিরিজ হেরে লজ্জার ইতিহাসে নাম লেখায় টাইগাররা। আইসিসির কোনো সহযোগী দেশের কাছে কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের সিরিজ হারার এটাই প্রথম ঘটনা!
মে মাসে ৫ ম্যাচের টি২০ সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসে জিম্বাবুয়ে। প্রথম ৪ ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিলেও শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। এর আগে মার্চ-এপ্রিলে পূর্নাঙ্গ সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ সফর করে শ্রীলঙ্কা দল। টি২০ সিরিজে ২-১ এ এবং টেস্ট সিরিজে ২-০ তে হেরে যায বাংলাদেশ। অবশ্য ওয়ানডে সিরিজে ২-১ এ সিরিজ জিতে টাইগাররা।
প্রমিলা ক্রিকেটের জন্যও ২০২৪ ছিল সাফল্য ব্যর্থতায় ভরা একটি বছর। সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার পাল্লাই ছিল বেশি ভারী। এ বছর অক্টোবরে ঘরের মাঠে মেয়েদের টি২০ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থতি বিবেচনায় শেষ মূহুর্তে টুর্নামেন্টটি আরব আমিরাতের শারজায় স্থানান্তরিত করা হয়। প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের সাথে জয়লাভ করে মেয়েরা। পরের তিন ম্যাচে ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও সাউথ আফ্রিকার সাথে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ।
জুলাই মাসে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হয় মেয়েদের এশিয়া কাপ। টি২০ ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত এ আসরে প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার সাথে হারলেও থাইল্যান্ড ও মালেশিয়ার বিপক্ষে জয়ের সুবাদে সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাঘিনীরা! সেমিফাইনালে ভারতের সাথে ১০ উইকেটে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় তারা।
নভেম্বর-ডিসেম্বরে আয়ারল্যান্ডের মেয়েরা টি২০ ও ওয়ানডে সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ সফর করে। ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের সবগুলো ম্যাচে বাংলাদেশের মেয়েরা জিতলেও ৩ ম্যাচের টি২০ সিরিজের সবগুলো ম্যাচেই হেরে যায় তারা। এছাড়া বছরের শুরুর দিকেও পরাজয়ের বৃত্তে ঘুরতে থাকে প্রমিলা ক্রিকেটাররা। অস্ট্রেলিয়ার সাথে ঘরের মাঠে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ও ৩ ম্যাচের টি২০ সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ হয় বাংলাদেশ। এর পরপরই ঘরের মাঠে ভারতের সাথে ৫ ম্যাচের টি২০ সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ হয় বাংলাদেশের মেয়েরা
0 মন্তব্যসমূহ